আজ মঙ্গলবার, ২১শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গোপালগঞ্জে জলাবদ্ধতার কারণে হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি রয়েছে!

জমি অনাবাদি

গোপালগঞ্জে জলাবদ্ধতার কারণে হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি রয়েছে!জমি অনাবাদি

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার কাজুলিয়া বিলে জমে থাকে পানি, স্থায়ী ভাবে পানি আটকে থাকায় দীর্ঘ ৩০ বছর অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে কাজুলিয়া বিলের হাজার একর জমি।

জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে এসব জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না এলাকার কৃষকেরা। অথচ এক সময় এই বিলের ধানে গোলা ভরে যেতো এলাকার কৃষকদের। বিলের পানি নিষ্কাশন করে এসব জমিতে আবারও সোনালি ফসল ফলানো সম্ভব বলে মনে করেন কৃষকসহ এলাকাবাসী।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে বন্যার পর থেকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া বিলের ভূমি মালিকদের দুঃখ শুরু হয়। বিলের হাজার হাজার একর জমি থেকে বর্ষার পানি না সরে স্থায়ী ভাবে আটকে যায়। অথচ এক সময় এ বিলের জমি থেকেই এলাকার মানুষের সারা বছরের ধান আসতো।

যাদের জমি নাই, তারাও অন্যের জমিতে কাজ করে জীবন যাপন করতেন। ফসল কাটার সময় এ অঞ্চলের মানুষের মুখে থাকতো হাসি। কিন্তু সেদিন ফুরিয়ে গেছে। হাজার হাজার একর জমি পানির নিচে রেখে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকতে হয় নিম্নবিত্ত মানুষকে। চাষের অযোগ্য হয়ে আছে কাজুলিয়া বিলের হাজার হাজর একর বিস্তর জমি, শীতকালেও শুকায়না পুরোপুরি।

এ ব্যাপারে কাজুলিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম আবুল কালাম আজাদ, একই গ্রামের বাসিন্দা আতিয়ার রহমান দাড়িয়া ও সমর চন্দ্র বিশ্বাস জানান, কাজুলিয়া বিলের মধ্যে রয়েছে ৫-৬টি বড় আকারের খাল। যে সব খালের মাধ্যমে পুরো বিলের পানি গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া নামক আরেকটি বড় খালে পড়ার কথা। আর তাতে কাজুলিয়া বিলটি শুকিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বিলের ভেতরের খালের গভীরতা বেশি হওয়ায়, আর গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া খালের তলদেশ উঁচু হওয়ায় বিলের পানি আর নামতে পারে না। ফলে বিলের জলবদ্ধতাও কমে না। ফসল না ফলাতে ফলাতে সেখানে এক ধরনের ঘাস এমন ভাবে জন্মেছে যে, তা পরিষ্কার করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কাজুলিয়া বিলের জমি মালিকদের দুঃখের বিলে পরিণত হয়েছে এখন এটি।
এলাকাবাসীর ধারণা এই বিলের মধ্য দিয়ে যে সব খাল গিয়ে গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া খালে গিয়ে পড়েছে, সে গুলো সুষ্ঠু ভাবে খননের মাধমে কাজুলিয়া বিলের স্থায়ী জলাবদ্ধাতা দূর করা সম্ভব। এখন ডোবায় পরিণত হয়েছে কাজুলিয়া বিলের হাজার একর জমি।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাখন লাল দাস জানান, কাজুলিয়া বিলের মধ্যে যে সব খাল রয়েছে তা সংস্কার এবং গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া খালটি পুনরায় খনন করলে বিলের জলাবদ্ধতা কমানো সম্ভব। এ জন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। হাজার হাজার একর জমি পানির নিচে পড়ে আছে। এ সব জমিতে এক সিজনও যদি ধান ফলানো যায়, তাহলেও এলাকার মানুষরা অনেক উপকৃত হবে। ১৯৮৮ সালের বন্যার আগে এখানে অন্তত এক সিজন ধান ফলানো হতো, কিন্তু তারপর থেকে পানি জমে থাকায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী বলেন, কাজুলিয়া বিলের জলাবদ্ধতার কারণে এখানে বিস্তর জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। বিলের খাল সংস্কারসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা গেলে এ বিল থেকে প্রচুর ধান উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারেগোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সফি উদ্দিন জানান, আগামী বছর খাল সংস্কারের জন্য বরাদ্দ রাখার চেষ্টা করা হবে। যাতে করে আবারো কৃষকরাসোনালী ফসল ফলাতে পারে সে ব্যাপারেচেষ্টা করা হবে।